কুষ্টিয়ায় বাউল সম্রাট লালন ফকিরের ১৩৫তম তিরোধান দিবস আজ।

বার্তা ডেক্সঃ
আজ ১৭ অক্টোবর (১লা কার্তিক)শুক্রবার আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট লালন ফকিরের ১৩৫তম তিরোধান দিবস আজ।
এ দিবসটি এবারই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। লালনের তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়া বাড়িতে বসছে তিন দিনব্যাপী সরন উৎসব । অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লালনের জীবনীর উপর আলোচনা সভা ও লালন মেলা। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন আয়োজকরা।
উৎসবকে ঘিরে লালন শাহের আখড়াবাড়ীতে সাধু, গুরু আর ভক্তদের পদচারণায় মুখোরিত পুরো এলাকা।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ আয়োজনের শুভ উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
উদ্বােধনী দিনে প্রয়াত সংগীত শিল্পী ফরিদা পারভিনের স্মরণে একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শন এবং প্রতিদিন আলোচনা সভা শেষে গভীর রাত অবধি চলবে লালন সংগীতের আসর। এবার একটু আগেভাগেই লালন আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়েছেন সাধু ভক্ত-অনুসারীরা। অনুষ্ঠানমালা চলবে আগামী রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত।
এদিকে তিরোধান দিবসকে কেন্দ্র করে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো লালন ভক্ত-অনুসারীরা ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করে। মরা কালী গঙ্গা পাড়ের মাঠে বসেছে মেলা। লালন আখড়াবাড়ি যেন হাজারো ভক্ত-অনুসারীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ১৩৫ তম লালন তিরোধান দিবসে মরা কালী গঙ্গার তীরের বিশাল মাঠে (পশ্চিমে) শতাধিক বাউল ভক্ত-অনুসারীরা অস্থায়ী তাবু গেড়ে আস্তানা তৈরি করেছেন থাকার জন্য। আর এসব পৃথক পৃথক আস্তানার মধ্যে অবস্থান নেওয়া বাউল অনুসারীরা একতারা-দোতারা সহ নানা বাদ্যের তালে গেয়ে চলেছেন লালন শাহ্ রচিত বাউল গান। আর মাঠের দক্ষিণে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ এবং উত্তরে বসেছে নানা পণ্য সামগ্রীর দোকান।
এ ছাড়াও লালন শাহের সমাধির পাশের উন্মুক্ত সেডের নীচেও বসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীরা। এখানেও তারা লালনের অমর বাণী গেয়ে চলেছেন আপন মনে।
জীবননগর থেকে আসা আলম সাধু বলেন, “সরকারের এমন উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। অনেক দেরীতে হলেও এত বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে লালণের বানী দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা এবং লালনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ায় আমরা সকলেই আনন্দিত।
দর্শনাথী ইয়াসমিন বলেন, “প্রতিবছরই আমি এখানে আসি। এবারে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ নেওয়ায় দর্শনার্থীরা আগেই আশা শুরু করেছে। প্রতিবছরের তুলনায় আরো বেশি মানুষের সমাগম হবে এবার।
স্থানীয় লালন অনুসারী আরিফ সাধু জানান, এখানে আসি মুলত: নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে শাঁইজীর মর্মবাণী চর্চা সহ ভক্তদের উজ্জীবিত করা ও পরস্পর ভাব বিনিময়ের জন্য। জামাল ফকির জানান, শাঁইজীর অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রতিদিনই এখানে অবস্থান করবো। এখানে হিংসা-অহঙ্কার নেই, জাত-পাত নেই। বড়-ছোট নেই। সেই দীক্ষা নিই আর সাধু-গুরুদের গান পরিবেশন ও ভাব বিনিময় দেখি। খুব ভালো লাগে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, লালন শাহের ১৩৫তম স্মরণোৎসব উদযাপনে তিন দিনের আয়োজনকে ঘিরে লালন একাডেমি,জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুুতি নেওয়া হয়েছে।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের দেহত্যাগের পর থেকে তাঁর স্মরণে এতদিন লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এমন আয়োজন করে আসছে। এবারই প্রথম জাতীয়ভাবে লালন তিরোধান দিবস উদযাপন হচ্ছে।