বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

দু’দিন ব্যাপী কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন নগর মুখরিত ছিল পিঠা উৎসবে

Reporter Name / ৩০১ Time View
Update : রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

কে এম শাহীন রেজা ॥
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ভাসে। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব। তেমনি গত ১৬ থেকে ১৭ তারিখ শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর শিক্ষাপল্লী পার্কের মাঠ প্রাঙ্গনে পিঠা উৎসব, ফার্নিচার ও কৃষি মেলার আয়োজন করেন আলাউদ্দিন আহমেদ শিক্ষাপল্লী পার্ক লি:।
খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। প্রাণের টানে ছুটে আসা সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠেছে উৎসবস্থল। শীতের পিঠা-পুলিসহ নানা বৈচিত্রময় পিঠার পসরা সাজিয়ে উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের মনোযোগ কেড়েছে পিঠা উৎসবে অংশ নেয় স্টলগুলো। সেই পসরায় মুগ্ধ হয়ে স্টলে স্টলে পিঠা খেতে ভিড় জমিয়েছেন সকল বয়সের মানুষ।
আলাউদ্দিন আহমেদ শিক্ষাপল্লী পার্ক লি: এর আয়োজনে শুক্রবার সকাল ৯টার সময় পিঠা উৎসব, ফার্নিচার ও কৃষি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপিস্থিত ছিলেন, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক আলাউদ্দিন নগরের রূপকার, শিক্ষাপল্লীর জনক ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লি: এর প্রতিষ্ঠাতা বীরমুক্তিযোদ্ধা দানবীর আলাউদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাঙালির ঐতিহ্য প্রবাহেরই একটি অংশ হচ্ছে পিঠা। এই পিঠা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে তাই আমি প্রতি বছর আমার এই গ্রামের মাটিতে এই উৎসব পালন করি। তিনি এটাও বলেন, শহর কেন্দ্রিক পিঠা উৎসব পালিত হলেও গ্রাম পর্যায়ে দেশের কোথাও এ উৎসব পালন করেন না আমি ব্যক্তিগত ভাবে গ্রামের মানুষদের সাথে নিয়ে বণ্যার্ঢ আয়োজনে পালন করে থাকি, কারন এসকল হারিয়ে যাওয়া পিঠা পুলি আমরা ছোটবেলায় খেয়েছি মা ও দাদীদের কাছ থেকে।
তিনি এটাও বলেন, বর্তমান প্রজন্মের সন্তানেরা এসব থেকে বঞ্চিত। তারা জানেই না আমাদেও গ্রাম বাংলায় কত ধরনের পিঠা আছে। আমি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উৎসব পালন করলাম আগামীতে আরো বৃহত পরিসরে করবো। তবে এবারের মেলায় পিঠার সাথে নতুন সংযোজন করেছি ফার্নিচার ও কৃষিপণ্য। এ দেশের লোক সংস্কৃতিরও অংশ সবার প্রিয় এই খাদ্যটি। আর পিঠা শিল্পীদের বানানো প্রতিটি পিঠায় থাকে প্রাণের ছোঁয়া, মিশে থাকে আবেগ যা পৃথিবীতে বিরল। পিঠা উৎসবের মুলেই রয়েছে ঢেঁকি। অথচ এখনকার মানুষ এই ঢেঁকি সম্পর্কে জানেই না। ঢেঁকি যেন জাদুঘরে রাখা লাগবে আগামীতে। তিনি আরো বলেন, শীতের সময় বাহারি পিঠার উপস্থাপন ও আধিক্য দেখা যায়। বাঙালির লোক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহি:প্রকাশ। যান্ত্রিক সভ্যতার এই ইট-কাঠের নগরীতে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঠার ঐতিহ্য। সময়ের স্রোত গড়িয়ে লোকজ এই শিল্প আবহমান বাংলার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও এ যুগে সামাজিকতার ক্ষেত্রে পিঠার প্রচলন অনেকটাই কমে এসেছে। সেই সাথে আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ জানান।
উক্ত পিঠা উৎসবে এবারে ৪২টি ষ্টল ছিল। লোকজ এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে বাঙালির পিঠা পার্বণের আনন্দধারায় দু’দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলা ঘিরে মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল দিনব্যাপী। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া উৎসবের দু’দিন শনিবার বিকেলে আয়োজক কমিটি বিচার বিশ্লেষন করে মোট ৪২টি স্টলের মধ্য থেকে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে একটি ফ্রিজ, ২য় স্থান অধিকারী স্টলকে এলইডি টিভি, তৃতীয় স্থান অধিকারী স্টলকে এলইডি টিভি। এছাড়াও প্রতিটা স্টলকে সান্তনা পুরস্কারে ভূষিত করেন আয়োজক আলাউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী নারীরা। তারা খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। এদেশের নারী সমাজ লোকজ শিল্পকর্মে অত্যন্ত নিপুণ এবং সুদক্ষ। তিনি আরও বলেন, বাঙালিরা চিরকালই অতিথি পরায়ণ। সামাজিক বন্ধনটিও শক্ত। এতে করে শহরের মানুষরা এখানে ছুটে আসবে। পিঠা খাওয়ার পাশাাপশি আনন্দ করবে-সে আনন্দের ভাগ সবাই পাবে। এ জন্যই শীতে আমাদের এই আয়োজন।
এছাড়াও দু’দিনব্যাপী এ উৎসবের অংশ হিসেবে উৎসবস্থলের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নাচ, গান, বাংলার ঐতিয্যবাহি লাঠিখেলা, আবৃত্তিসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এতে বিভিন্ন শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন সময়ের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা, তাদের হাতেও শান্তনা পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি। উক্ত অনুষ্ঠানে আলাউদ্দিন আহমেদের নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ। সংক্ষিপ্ত ভাবে তারা তাদের বক্তব্য তুরেন ধরেন। দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনা করেন, মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হোসেন জোয়ার্দার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page