সাবেক সেনাদের দল আসছে, থাকতে পারেন সাবেক ২০ মন্ত্রী-এমপি

নিউজ ডেক্সঃ
সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একাংশের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে। এই দলে সাবেক সেনা কর্মকর্তারা ছাড়াও আধাসামরিক, ব্যবসায়ী, সুধীসমাজের প্রতিনিধি, সাবেক আমলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বঞ্চিত নেতা ও পেশাজীবীরা যোগ দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন। দলটি গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল। এরই মধ্যে এই দলের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান। সহসম্পাদক পদে রয়েছেন, মেজার (অব.) দেলোয়ার হোসেন খান ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা নুরুল কাদের সোহেল।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নতুন এই রাজনৈতিক দলটির নাম এখনো ঠিক হয়নি। এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
আগামী ২৬ মার্চ দলটির আত্মপ্রকাশ অনুুষ্ঠানে নাম প্রকাশ করা হতে পারে।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামালসহ সাবেক পাঁচজন সেনাপ্রধানকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে বলে সম্প্রতি একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এর প্রতিবাদে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভুঁইয়া গত ৪ ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুকে পোস্টে জানান, ‘তাঁর রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিষয়ে প্রকাশিত খবর সঠিক নয়। পরের দিন আরেকটি পোস্টে জানান, সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমটি দুঃখ প্রকাশ ও ভুল স্বীকার করেছে এবং খবরটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।আরেক অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল ওই খবরটি প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমটির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করারও ঘোষণা দেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, ১৭০ জন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, চারজন সাবেক মন্ত্রী, ১৫ জন সাবেক সংসদ সদস্য, পাঁচজন সাবেক আমলা এবং ২০ জন দেশবরেণ্য সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া দেশের শীর্ষ ১০ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তা এই দলে যোগ দিতে পারেন। এমনকি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যবসায়ী নেতারা এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা যোগ দিতে পারেন বলে তাঁরা আশা করছেন। তবে দলের গঠনপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার কারণে সবার নামের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। আইনগতভাবে গঠনপ্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।এ বিষয়ে দলের আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ন্যায্যতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ ভালো মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলটি পরিচালিত হবে।প্রাথমিকভাবে দলটি সাবেক সামরিক সদস্য সমর্থিত হলেও এখানে সব পেশাজীবীর সমন্বয় থাকবে। এই দলে বড় অংশজুড়ে নেতৃত্ব দেবে সমাজের তরুণ ও ছাত্ররা। খুব শিগগিরই জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে।কেন এই রাজনৈতিক দল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বলছে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ভূমিছাড়া হয়ে যায়। আমরা সেখান থেকে ব্যতিক্রম হয়ে দলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।ঐতিহাসিক মীমাংসিত কোনো বিষয়ে আমরা বিতর্ক করব না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কিংবা ভূরাজনৈতিক পক্ষভুক্ত হবে না দলটি। মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি। এ ছাড়া মানুষের সাংবিধানিক, মৌলিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় কাজ করবে দলটি।
দলটির সংগঠকদের দাবি, তাঁদের এই প্রক্রিয়ার যুক্ত করার জন্য বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক সদস্য এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফরমে যুক্ত হতে পারেন।
ছাত্র আন্দোলেনে যুক্ত আটজন গত ২ ফেব্রুয়ারির সভায় এসে দলটিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন থেকেও এই রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে পারেন বলে সংগঠকরা আশা করছেন।
দলটির সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কমিটির সহসম্পাদক নুরুল কাদের সোহেল গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘নতুন এই দলে জাতীয় পার্টির মধ্যে রওশনপন্থীরাসহ অনেক নেতা যোগ দিতে পারেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বঞ্চিত অনেক নেতাও যোগ দেবেন বলে আমরা আশা করছি। আমাদের এই নতুন দলটিকে আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা ঠিক না। আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগবিরোধী লোকজনের সংখ্যাই বেশি।’