মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার মোকামে উঠতে শুরু করেছে নতুন আমন ধান

Reporter Name / ১৫৬ Time View
Update : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥

চলতি আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু করেছে সরকার, চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গতবারের চেয়ে ২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দরও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিকেজি ধান ৩৩, আর চাল ৪৭ টাকা করা হয়েছে। তবে স্থানীয় বাজারে এর চেয়ে বেশি মূল্য পাওয়ায় কুষ্টিয়া শহরতলির জুগিয়া-বারাদি ভাগার এলাকার কৃষক শরিফুলের মতো কেউ লোকসান দিয়ে ধান গুদামে নিতে ইচ্ছুক নন। আনারুল ইসলাম ও তাহের হোসেন বলেন, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মূল্য চড়া। এর পরও প্রতি মণে ৩০ টাকা এবং এর সঙ্গে বাড়তি ট্রাক ভাড়াসহ অর্ধশতাধিক টাকা লোকসান দিয়ে কেউ সরকারি গুদামে ধান নেওয়ার কথা নয়।
কুষ্টিয়ার খাজানগরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন ধান ওঠায় গত এক সপ্তাহে কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম মণ প্রতি কমেছে ৫০-৮০ টাকা। কিন্তু চালের বাজারে দাম কমেনি। কোথাও কোথাও বাড়ার অভিযোগও আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাজানগরে চালের বাজারে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে পুরনো সিন্ডিকেট, মিল মালিকরা যার প্রধান অনুঘটক। বিভিন্ন সূত্র জানায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে ১১ মিল মালিকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় চালের দাম নিয়ে রাজত্ব করেছেন তারা। বর্তমানেও ধান-চালের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই। খাজানগরে রয়েছে অর্ধশত অটো রাইস মিল। রাজধানী ঢাকার বাজারে যে মিনিকেট চাল পাওয়া যায়, তার বড় অংশ আসে কুষ্টিয়ার ৩১ স্বয়ংক্রিয় বা অটো রাইস মিল থেকে। কিন্তু ১১ মালিকের হাতেই থাকে পুরো খাজানগরের নিয়ন্ত্রণ। দেশ এগ্রো ফুডের মালিক আব্দুল খালেক বলেন, দেশের চালের বাজার খাজানগর থেকে নিয়ন্ত্রণ হয় না।
এটি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের ১০টি করপোরেট কোম্পানি। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কুষ্টিয়ার বিএনপি নেতা ও কুষ্টিয়া অটো মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, কয়েক দিন হলো নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধান উঠলে চালের দাম কমে যাবে। কুষ্টিয়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান সিন্ডিকেটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, খাজানগরের কয়েকটি মিলে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুদ রয়েছে। ছোটখাটো অভিযান চালিয়ে কোনোভাবেই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব না। সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন সবসময়ই তৎপর রয়েছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। তিনি আরো বলেন, নতুন ধান মাড়াই করে চাল পর্যন্ত পৌঁছতে কয়েক দিন সময় লাগে। এ ছাড়া ধান ও চাল সংগ্রহের পথে অন্যতম বাধা হলো গুদামে জায়গা সংকট। কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলা থেকে এ বছর ১৯ হাজার ১০০ টন সিদ্ধ চাল, ৬ হাজার ৭০০ টন ধান ও ১ হাজার ৬০০ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এর ধারণ ক্ষমতা সরকারি গুদামের নেই।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, যে পরিমাণ ধান ও চাল কেনা হবে, গুদামে তার অর্ধেক জায়গাও নেই। এ ছাড়া আগের কেনা চাল এখনও রয়ে গেছে। তাই নতুন করে গুদাম নির্মাণ করা জরুরি। কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, চালের সিন্ডিকেট দমন না করে সরকার নিজেই এবার দাম বাড়িয়েছে। এতে কৃষকের নামকাওয়াস্তে লাভ হলেও বহুগুণে চাপ বাড়বে ভোক্তার ওপর। মাঝে অন্যান্য বছরের মতো আঙুল ফুলে কলাগাছ হবে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এভাবে কখনও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বরং, ইউনিয়ন পর্যায়ে গুদাম বাড়াতে হবে, কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে, সবশেষ উৎপাদিত শস্য ন্যায্যমূল্যে সরকারকেই সংগ্রহ করে সুষম বণ্টন করতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page